কৃষি উপকরণ ও কৃষি কর্মীদের ঐকামিত্মক প্রচেষ্টায় এই এলাকার কৃষকগণ যথেষ্ট অগ্রগামী। আবহাওয়ার সঙ্গে সংগতি রেখে এখানে ফসলের চাষাবাদ হয়ে থাকে। আবাদকৃত প্রধান প্রধান ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, গোল আলু, শাকসব্জি, পান, ভহট্টা, গম, সরিষা, আখ, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি। কোন কোন এলাকায় মিষ্টি আলুসহ অন্যান্য রবি শষ্য আবাদ হয়ে থাকে। মাথাপিছু জমির পরিমান কম হয়ে থাকলেও কৃষকগণ এলাকার জনগণের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে আসছে। নিবিঢ়ভাবে চাষাবাদ করার ফলে তারা সারা বৎসরই কোন না কোন ফসল আবাদ করছে। সেচ ব্যবহার করার ফলে উফসী জাতের ধানের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বছরের পর বছর ধান আবাদ করার ফলে জমির উৎপাদন ÿমতা কমে যাচ্ছে। মাটির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। উপজেলার ৭৭-৮০ ভাগ জমিতে ধানের চাষ হয় এবং একমাত্র একক ফসল হিসাবে ধানই সারা বছরে চাষ হয়। এদিকে প্রতিনিয়ত রাসত্মা ঘাট, বাড়ীঘর, অফিস, কারখানা, হাটবাজার, ইটভাটা ও বিদ্যালয়সহ বহুবিধ প্রষ্ঠিান স্থাপন, নদী ভাংগন ইত্যাদি কারণে আবাদযোগ্য জমির পরিমান কমে যাচ্ছে। এবং এর সাথে পালস্না দিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে খাদ্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার ওপর রয়েছে খরা, বন্যা, আকাল বন্যা, অসময়ে এবং অসম ঠান্ডা ও শৈত্য প্রবাহ, শিলাবৃষ্টি, পোকামাকড় ও রোগবালাই এর প্রাদুর্ভাব। এর সাথে যোগ হয়েছে কৃষকদের অজ্ঞতা জনিত পরিচর্যায় অবহেলা। যেমন- অধিক বয়সের চারা রোপ, বীজতলার সঠিক পরিচর্যা না নেওয়া, জমিতে সময়মত পানি না রাখা, সুষম সার ব্যবহার না করা, অধিক পরিমানে ইউরিয়া সার ব্যবহার করা, সঠিক বালাইনাষক সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে না পারা ইত্যাদি। এছাড়াও সঠিক সময়ে ধান না কাটতে পারার ফলে অনেক ধান ঝরে পড়ে ফলনের হ্রাস ঘটায়। সর্বোপরি আমত্মপরিচর্যাগত করনে একই মাঠে কৃষক থেকে কৃষকে ফলন পার্থক্য দেখা যায়। এসব সমস্যার নিরসনে ধান ফসলের ফলন পার্থক্য কমানো প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এবং প্রকল্পটির বাসত্মবায়নের ফলে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছে বলে আমাদের নিকট প্রতীয়মান হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকগণ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে ফলন বৃদ্ধি দেখে উদ্ভুদ্ধ হয়েছে এবং এর ফলে প্রযুক্তির সম্প্রসারণও সহজ হয়েছে। এখানে আমরা সুষম সার ব্যবহারের জন্য মৃত্তিকা গবেষণা, কুমিলস্না থেকে মাটি পরিÿা করিয়ে সারের সঠিক মাত্রার ব্যবস্থাপত্র সংগ্রহ করি এবং কৃষকগন সেমতে সার ব্যবহার করেছেন। ফলে সুষম সার ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে। জমিতে সারের আধিক্যজনিত বা অভাবজনিত কোনরূপ লÿণ প্রকাশ পায় নি। আমরা সঠিকভাবে জমি চাষ দিয়ে রোদে শুকানোর ব্যবস্থা করেছি। এর ফলে আগাছা ও মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। অধিকাংশ জমিতে ফারম্নক ফার্টিলাইজার প্রস্ত্ততকৃত চুকচুক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও কোন কোন জমিতে গোবর সার এবং পোলট্রি লিটার প্রয়োগ করা হয়েছে। এভাবে জমিতে জৈব উপাদানের সঠিক মাত্রায় উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। বীজ শোধন করে জাগ দিয়ে অর্থাৎ অঙ্কুরোদগম করে বীজতলায় বপন করা হয়েছে। এতে করে শতকরা গজানোর হার বেড়ে গেছে এবং কিছু কিছু বীজবাহিত রোগ থেকে রÿা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। আমরা আদর্শ বীজতলা করেছি (শুকনো বীজতলা)। ফলে সুন্দর ও সুস্থ্য- সবল চারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। সঠিক অনুপাতের শিকড় ও পাতা সমৃদ্ধ চারার গুরম্নত্ব সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করা হয়েছে। বীজতলায় বালাইনাষক ছিটানো হয়েছে। এর ফলে অনেকগুলো ছত্রাকের আক্রমণ হতে চারাকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। সঠিক বয়স হবার পর চারা সঠিকভাবে তুলে জমিতে ১/২’’ পরিমান গভীরতায় রোপন করা হয়েছে। এ সময় জমিতে ছিপছিপে পানি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চারা লাগানোর সময় লঘু পদ্ধতিতে লাগানো হয়েছে এবং সাথে সাথে Perchingকরা হয়েছে। সেচ ব্যবস্থাপনার প্রতি গুরম্নত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়াও প্রয়োজনমত সম্পুরক সেচ প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রতিবারের মত এবারও মাজরার আক্রমণ হয়েছিল তবে তা সময়মত নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ মৌসুমে চারিদিকে খোলপোড়া রোগের প্রাদুর্ভাব থাকলেও প্রদর্শণীর ফসলে খোলপোড়ার আক্রমণ হয়নি। পরিচ্ছন্ন চাষাবাদের কারনেই তা সম্ভব হয়েছে। ৮০% ধান পাকার সাথে সাথেই আমরা মাঠ দিবস করে ফসল কর্তন করি এবং আর্দ্রতা পরিমাপ করে ফলন নির্ধারণ করি। এলাকার চাষীরা মাঠ দিবসে অংশগ্রহণ করে এবং সফলতা দেখে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে। শস্য আবাদের নিবিঢ়তা বাড়ার কারনে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমান কমে মাটির স্বাস্থ্য আজ হুমকির সম্মুখিন। মাটির স্বাস্থ্য সুরÿার জন্য আমরা ধৈঞ্চা আবাদ করে তা মাটিতে মিশিয়ে দেয়া এবং খামারজাত সার (FYM) এর উপর গুরম্নত্ব আরোপ করেছি। ফসলে খতিকর পোকামাকড় দমনে ধানÿÿতে পাখির আশ্রয়স্থল বানানোর জন্য আমরা Perching এর উপর গুরম্নত্ব আরোপ করেছি। এছাড়াও ফেরোমোন ট্র্যাপ ও লাইট ট্র্যাপ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করে চলেছি। এদেশ কৃষিনির্ভর দেশ এবং আমাদের কৃষি প্রকৃতিনির্ভর। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারনে জলবায়ুতে পরিবর্তন আসছে। সাথে সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে। এর সাথে সাথে যোগ হয়েছে নতুন নতুন পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের প্রকোপ। আগে যে পোকামাকড় ও রোগবালাই গৌন ছিল এখন মাঝে মাঝেই তা মহামারি আকার ধারন করে ফসলের অভাবনীয় ÿতি করছে। আকস্মিক ফসলহানিতে কৃষক যেন কিছুটা সহায়তা পায় এজন্য কুমিলস্না বার্ড এর সাথে যৌথভাবে কৃষিবীমা চালুর পরীÿামূলক কার্যক্রম চলছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের মোকাবেলা করা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সাথে সাথে কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লÿÿ্য সুষ্ঠু ও বাসত্মবধর্মী পরিল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা আশা করব গৃহীত এ পরিকল্পনা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ উপজেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভহমিকা রাখবে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস