Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভৌগলিক পরিচিতি - আলফাডাঙ্গা

View Larger Map

 

উপজেলা ভূমি প্রকৃতিঃ

            আলফাডাঙ্গা উপজেলার প্রধানতঃ এঁটেল, দোঅাঁশ ও বালুমাটিতে গঠিত। প্রথমত দু‘ধরনের মাটি বেশ উর্বর বিধায় ধান, পাট, গম, নানা রবিশষ্য বেশ উৎপন্ন হয়।

উপজেলার প্রাকৃতিক রূপঃ

            ঋতু পরিক্রমায় আলফাডাঙ্গা প্রাকৃতিক রূপ সৌন্দর্য মনোরম আকার ধারণ করে। এখানে ছয়টি ঋতুই বিরাজমান। নদ - নদী এবং যথেষ্ট গাছপালা থাকায় এলাকার আবহাওয়া বেশ স্বাস্থ্যকর।

উপজেলার ভাষা ও সংস্কৃতিঃ

          সামাজিক মূলবোধ যখন ভূলুণ্ঠিত, মানবিক বিপর্যস্ত, চেতনা ও বিবেক বিপর্যন্ত, আকাশ যখন মেঘমেদুর, চলমান সমাজ যখন ঘুণে ধরে যায় ঠিক তখন কোন কোন এলাকার ভাষা ও সাংস্কৃতিক জগৎ ঘুমন্ত জাতিকে সংকীর্ণতার বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে সেই জাতিকে জাগিয়ে তোলে। বাংলার প্রাচীন ভাষা ছিল অষ্টিক জনগোষ্ঠীর ভাষা। আর্যরা এ ভাষাকে অসুর, দস্যু,থেচার জাতীয় প্রাণির ভাষা বলে মনে-প্রাণে ঘৃণা করতো।

            মৌর্ষ ও গুপ্ত আমলে সাংস্কৃতিকে রাজভাষারূপে স্বীকৃত দেওয়া হয়। ৬৫০ খৃঃ হতে ১১০০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত সময় বাংলা ভাষাকে তার সৃষ্টির যুগ বলা হয়। প্রাচীন কালে বাঙ্গালী জাতি থেকে বাংলা ভাষা চালু হয়। তারপর হাটি হাটি পা - পা করে এই ভাষা যৌবন প্রাপ্ত হয়।

            আস্তে আস্তে এই বাংলা সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে। আলফাডাঙ্গা স্থানীয় বাসিন্দা যারা রয়েছে ১০০ ভাগই বাংলার কথা বলে। সমাজে যারা একটু উচ্চ শিক্ষার অধিকার তারা অন্য দু‘একটি ভাষা জানলেও বাংলা ভাষার মাধ্যমেই তাদের দৈনন্দিন কাজ চলে। বাংলা ভাষার কথা বললেও আঞ্চলিক ভাষার প্রভাব বেশী নয়।

            এখানে অনেক দামী - নামী কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী খুব বেশী না থাকলেও এলাকাবাসীদের সংস্কৃতির প্রতি মন আছে, আছে তাদের প্রাণ। বৎসরের বিভিন্ন মৌসুমে নিজেরাই জাগিয়ে তোলে তাদের নিজেদের গড়া সাংস্কৃতিক জগৎটা। তবুও বলা যেতে পারে দিনে দিনে এগিয়ে যাচ্ছে ভাষা ও সাংস্কৃতিতে উন্নতির দিকে মন্থর গতিতে। অদূর ভবিষ্যতে আলফাডাঙ্গার সকল শিল্পী, কলাকুশলী ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের গ্রাণ কেন্দ্র স্থান করে নিতে পারবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে।

শীতের আগমনের সাথে সাথে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে রাতের বেলায় বিচার গানের আসর বসত। আশে পাশের উপজেলা ও জেলার প্রখ্যাত বিচার গানের আসরে মাদারীপুরের বিচার গানের সম্রাট আঃ হালিম বয়াতী, দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের প্রখ্যাত বিচার গানের বয়াতী মোসলেম বয়াতী তার জামাতা গোলাম কিবরীয়া, খুলনার আকরাম বয়াতী, নড়াইলের রওশন বয়াতী,হাজরা বিবি, মহাম্মদপুরের পবিত্র কুমার বিচার গানের আসরে গান পরিবেশন করতেন। এদের আগমনে এলাকার মানুষের মাঝে গান শোনার উৎসাহের সাড়া পড়ে যেত। এছাড়া স্থানীয় বয়তীদের মধ্যে ছিল পানাইলের কিয়ামুদ্দিন বয়াতী, চরডাঙ্গার সরোয়ার বয়াতী ও কাঞ্চন আলী, হেলেঞ্চার বাকা বয়াতী, বানার দলিলউদ্দিন ও মোসলেম বয়াতী প্রমুখ। এ সব প্রখ্যাত বিচার গানের বয়াতীদের গানের ভাব ও সুরের মুছনায় উপস্থিত শ্রোতারা গানের ভাব জগতে নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলত।

উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থাঃ

          আলফাডাঙ্গা উপজেলা ফরিদপুর জেলার একটি ছোট উপজেলা হলেও শিক্ষা দীক্ষায় অন্যান্য উপজেলার থেকে অনেক অগ্রসর। এ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭১টি। প্রায় প্রতিটি গ্রামে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ উপজেলা শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে খ্যাত মরহুম কাঞ্চন মুন্সি এলকার সকলকে সাথে নিয়ে সম্পূর্ন  নিজস্ব উদ্যোগে ১৯৩৪ সালে এ উপজেলার কামারগ্রামে কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমী নামে উপজেলার মধ্যে প্রথম হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এ উপজেলার শিক্ষা ক্ষেত্রে যার অবদান আজও মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। তখন থেকে এ উপজেলার মানুষ শিক্ষা দিকে ধাবিত হয়ে পড়ে। তার দৃষ্টান্ত অনুরসন করে এভাবেই সমাজের বিত্তবান ও বিদ্যুৎসাহী ব্যক্তিগণ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে এক বা একাধিক হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এ ভাবেই উপজেলার শিক্ষার অগ্রগতি সাধিত হয়ে এ পর্যন্ত এসে পৌছিয়েছে।  অতীত ও বর্তমানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ন পদে এ উপজেলার কৃতি সন্তানেরা কর্মরত ছিলেন ও আছেন। যেমন মঞ্জুর হোসেন বুলবুল রাস্ট্রপতি একান্ত সচিব(কর্মরত), শেখ হেমায়েত হোসেন, অতিরিক্ত আইজিপি (কর্মরত), হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার, সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোশেন, ডাঃ এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার, আসাদুজ্জামান মিন্টু, ডি, আই, জি, সৈয়দ মনিরুল ইসলাম(মন্টু), এ, আই, জি (অবঃ), এস, এম বায়েজিদ, কর্ণেল, নাজমুল হাস ( লেঃ কর্ণেল), গিজির আহমেদ, উপ-সচিব, পরিচালক এষ্টেট ( রাজউক) (কর্মরত), ব্যারিষ্টাল সাবরিনা জেরিন ( অনি ), বার এট‘ল, ব্রিগেডিয়ার (অব) মোঃ ওহিদুজ্জামান,মোঃ ব্রিগেডিয়ার (অব) সামসুজ্জামান, আন্দন কুমার বিশ্বাস, এডিসি(কর্মরত), আসাদুজ্জামান (মেজর), রেজোয়ান খান( এস,পি), সাজিদ হোসেন ( এস,পি) প্রমুখ।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা ক্রীড়াঙ্গন

            খেলাধুলার গৌরব বিজয়ে নয় অংশ গ্রহণে। ‘‘ সুস্থদেহ সুন্দর মনের পরিচায়ক’’। শিক্ষা যেমন মানুষকে ভদ্র, নম্র ও সাহসী করে তোলে, তেমনি খেলাধুলা মানুষকে শান্তি সঞ্চার করে। আলফাডাঙ্গার উপজেলায় জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু এর গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। কালের জন্মান্তরে এখানে সুনামধন্য খেলোয়ার জন্ম নিয়েছে। যেমনঃ বানার রাহেন, চাপুলিয়ার ফায়েক, বারইপাড়ার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ মোমিন,  চান্দ্রার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সোবহান, কুচিয়াগ্রামের সিদ্দিক মোল্যা, গোপালপুরের আতিয়ার মোল্যা, আদম আহমেদ খান এব টিকরপাড়ার ইসমাইল এবং যোগীবরাটের কবির প্রমুখ হা-ডু-ডু খোলোয়াড়গণ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন খেলার মাঠে অভূতপূর্ব নৈপূণ্য দেখিয়ে নিজেদের ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিচিতি বৃদ্ধি করেছে। খ্যাতিমান খেলোয়াড়দের খেলার নৈপূণ্যতা আজ নতুন প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পের মত মনে হয়। ফুটবল খেলাও এ উপজেলার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বর্তমান প্রজন্ম ক্রিকেট খেলার প্রতি বেশী উৎসাহী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া এ উপজেলাতে দাঁড়িয়াবান্দা, কানামাছি, গোল্লাছুট প্রভতি  খেলার প্রচলন রয়েছে।

উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ

          স্বাধীনতার পূর্বে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যান্ত খারাপ। উপজেলা সদরের সাথে উপজেলার অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের কোন পাকা রাস্তা ছিল না। তখন যাতায়াতে বাহন ছিল ঘোড়ার গাড়ী, গরুর গাড়ীর এবং বর্ষাকালে যাতায়াতের একমাত্র বাহন ছিল নৌকা। দেশ স্বাধীনের পর এ উপজেলার যাতায়াত ব্যবস্থা অভূতপূব উন্নতি সাধিত হয়। উপজেলার প্রতিটি গ্রামের সাথে উপজেলা সদরের পাকা রাস্তার সংযোগ রয়েছে। উপজেলা সদর থেকে রাজধানী ঢাকা যাতায়াতের জন্য দুরপাল্লার কয়েকটি বাস রয়েছে। এছাড়া উপজেলার অভ্যন্তরিণ রাস্তাগুলোতে গণ পরিবহণ হিসেবে ইজিবাইক, নসিমন - করিমন ও ভ্যানগাড়ী যাতায়াত করে। যার প্রেক্ষিতে মানুষ অতি সাহজে অল্প সময়ের মধ্যে উপজেলা সদরে পৌছে যায়।

উপজেলার শিল্পঃ 

সরকারী পৃষ্ঠপোশকতার অভাবে আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ভারী কোন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি। তবে উপজেলায় প্রচ্ছন্নভাবে কুঠির

শিল্প বিদ্যমান আছে।

(ক) তাঁত শিল্পঃএ উপজেলার পাড়াগ্রামে এক সময় তাঁত শিল্পে সমৃদ্ধ ছিল। গ্রামের অর্ধেকের বেশী লোক তাঁতী সম্প্রদায়ভুক্ত। প্রত্যেক বাড়িতে কাপড় বুনানো তাঁত ছিল। দিনের বেলা মহিলারা সূতা কাটত আর রাতের বেলায় পুরুষেরা সুতা দিয়ে কাপড় বুনতো। এ গ্রামের উৎপাদিত কাপড়ের মধ্যে ছিল শাড়ী, লুঙ্গী ও গামছা। এখানকার উৎপাদিত গামছার বিশেষ সুখ্যাতি ছিল। উৎপাদিত কাপড় এ উপজেলার হাট-বাজার ছাড়াও আশে পাশের  উপজেলার হাট -বাজারেও বিক্রি হত। এখানকার উৎপাদিত কাপড় এ উপজেলার মানুষের কাপড়ের চাহিদা মিটাত। আধুনিকার সাথে খাপ খাইয়ে না চলার কারনে এ গ্রামের তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

(খ) মৃৎ শিল্পঃ এ উপজেলার জয়বেদপুর, চান্দড়া, বড়ভাগ ও টগরবন্দ গ্রামের পাল সম্প্রদায়ভুক্ত লোক মৃৎ শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাদের তৈরী হাড়ি পাতিল দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য ছিল। কিন্ত আধুনিক যুগে এর বিকল্প জিনিসপত্র তৈরী হওয়ায় এর প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা এখনো রয়ে গেছে।

উপজেলার পাখি সম্পদঃ

            বাংলাদেশ তথা ফরিদপুর জেলার প্রান্ত সীমায় অবস্থিত আমাদের এ আলফাডাঙ্গা উপজেলা । আলফাডাঙ্গার প্রকৃতিক সম্পদের কথা সুবিদিত। প্রকৃতিক সম্পদে সম্পদময়ী আলফাডাঙ্গার নদ - নদী, বিল - বাওড়ে শীত নামার সাখে দেখা যায় রংবেরংু এর অথিতি পাখির সমারোহ । পাখি শিকারের জন অতীতে  এ অঞ্চলের খুব নাম ডাক ছিল। শুধুর সাইবেরিয়া থেকে এ অঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসত। এখানে প্রায় পাঁচ মাস বসবাস ও বংশ ঘটায়ে আবার চলে যেত মুল আবাসস্থলে। শোনা যায় এক সময়ে এ সমন্ত পাখিদের ডানা ঝাপটার শব্দে হাওড় পাড়ের গ্রামবাসীদের ঘুম ভেঙ্গে যেত। ঘুম হতো না শিকারীদের পাখি শিকার এককালে শখের বিষয় । আজ শুধুই অতীত ও মুখরোচক আলোচনা বিষয়। যদিও আইন করে শিকার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপরে শিকারের নেশা এখনও গ্রামবাসীর কাটিনি। পাখিসমূহঃ দোয়েল, কোয়েল, ময়না, শ্যামা, কোকিল, টিয়া, টুনটুনি, বাঁদুড়, ক্যাঁচকেঁচে, ভাঁস শালিক, গাঙ্গ শালিক, মাছরাঙ্গা, বালিহাঁস, লালচিল, বক,কাক, দুধরাজ, চড়ুই, গাছ ঠোকরা, টিয়া, ঘুঘু, হড়িয়াল, হলুদ পাখি, বুলবুলি, পানকড়ি, চামচিকে, পাঁ্যাচা,পায়রা, কবুতর, হাড়গিলা, ঈগল, শকুন, শামুক ভাঙ্গা, বউকথা কও, হাসপাখি প্রভৃতি।

উপজেলার জলজ প্রাণীসমূহ ঃ

          জলজ প্রাণী বলতে আমরা মৎস্য সমূহ ছাড়াও জলনির্ভর প্রাণীকে উল্লেখ করতে পারি। আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিলুপ্ত, অর্ধবিলুপ্ত ও বর্তমান জলজ প্রাণী সমূহের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলোঃ কুমির, কামট, ভাসাল, কচ্ছপ, রুই কাতলা, চিতল, বোয়াল, ইলিশ, কৈ, শোল, গজার, পুটি, টেংরা, সরপুটি, খৈলসে, রয়না, তিতপুঁটি, তারাবাইন, আইড়, জিয়েল, চ্যালা, ট্যাপা, পাঙ্গাস, মাগুর, বাঁশপাতা, কুচে, ঘাড়ো, সিলভার কাপ, মিনার কার্প, গ্লাস কার্প, ক্রস কার্প, চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, ভূষি ইচা, ঘুশো চিংড়া, বাইন, বাউশম, কালী বাউশ, বাজারী, ভাতো ট্যাংরা, টাকি, ভাতো টাকি, গ্যাং ট্যাংরা, নায়লোটিকা, জাপানী পুঁটি, জাপানী রুই, আমেরিকার রুই, কাল্ল, তেল টাকি, খয়রা, বাগাইড়, ডানকানা, বালে, চেউবালে, মলুঙ্গি, কাঁাকড়া, শিশুক, প্রভৃতি।

উপজেলার ফলফলাদিঃ

আলফাডাঙ্গা ফলফলাদিতে পূর্বে তেমন সমৃদ্ধ ছিলনা। বর্তমানে বন্যা কম হওয়ার কারনে আলফাডাঙ্গায় প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন প্রকার ফল উৎপাদিত হয়। যেমনঃ আম, জাম, কাঁাঠাল, কলা, তাল, বেল, লিচু, পেয়ারা, তেঁতুল, বরই, জামরুল, ছবেদা, আমড়া, কামরাঙ্গা, পেঁপে, ডালিম, আতাফল, জাম্বুরা, নারকেল, শুপারি প্রভৃতি ফলের গাছ প্রতি বাড়িতেই কম বেশি দু-চার টা পাওয়া যায়।

আলফাডাঙ্গার কৃষি  

আলফাডাঙ্গা উপজেলা মধুমতি ও চন্দনা বারাশিয়া নদী দ্বারা বিধৌত বিধায় এখানকার মাটি খুব উর্বর। এ উপজেলার উল্লেখ্যযোগ্য ফসলের মধ্যে যেমনঃ ধান, পাট, গম, মুসূরী, পিঁয়জ,রসূন, ছোলা, মাসকলাই, মুককলাই, খেসারী, মটর কলাই, ডাবরী, রাই, সরিষা, তিল, প্রভৃতি ফসল প্রচুর পরিমানে জন্মায়।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার পীর মাশায়েকের পরিচিতিঃ

এ উপজেলা নাম জানা অজানা অনেক পীর মাশায়েক ও আধ্যাত্মিক লোকের পূর্ণভূমি। এ উপজেলার ধর্ম মত নির্বিশেষে মানুষ  এদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে। এদের অন্তধ্যানের পরেও মানুষ শ্রদ্ধা করে।

০১। শাহ সুফী মওলানা বেদন শাহঃ কামারগ্রাম হযরত মওলানা বেদন শাহ(র) এর দরগা আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের প্রাণকেন্দ্র। জনশ্রুতি এলাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই শাহ সুফী হযরত মওলানা বেদন শাহ(র) । শাহ সুফী হযরত মওলানা নেয়ামত উল্লাহ(র) ও শাহ সুফী হযরত মওলানা পানাউল্লাহ(র) এদের পিতৃপুরুষ। এরা এসে ছিলেন ভারত বর্ষের তথা পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকাতে পরবর্তীতে (ক্ষমতা) অর্থমোহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক নির্দেশে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। বেদন শাহ (র) বহু দুর্গম অচেনা পথ পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ অঞ্চলের সাবেক যশোর জেলার বর্তমান ফরিদপুর জেলার বিরাট বনভূমিতে আস্তানা করে থাকেন। তার সাথে ছিলেন অনেক আউলিয়া যাঁদের তিনি এ অঞ্চলের আশে পাশে ইসলাম প্রচারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতেন। তখন খানকায় বসতো জিকিরের মজলিস। এলাকার বিভিন্ন মতালম্বীরা এ দেখে দারুরভাবে ঠাট্টা মশকরা করতেন। জনশ্রুতি তিনি খানকা থেকে বের হয়ে স্বীয় শাহাদাত অঙ্গুলী তাদের দিকে ইংগিত করইে অনেকের শরীরে কাঁপন এসে গেল। এর পরে তিনি খড়ম পায়ে দিয়েনদী পার হয়ে গেলেন। তার এই অলৌকিক কর্মকান্ড দেখে সকলে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। ফিরে আসার পরে সকলে ক্ষমা চেয়ে নিলেন। কতিপয় বিধর্মী কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলেন। এ ঘটনা বিদ্যুৎবেগে দূর দুরান্তে পৌঁছে গেল।জনশ্রুতি প্রবল বৃষ্টি ও কাল বৈশাখী ঝড়ের ভয়ে বেদন শাহের স্মরণাপন্ন হতেন। আল্লাহকে স্মরণ করে আঙ্গুলী হেলন করলে ঝড় বন্দ হয়ে যেত। আনেকে অনুমান করতে পেরেছেন বেদনশাহ(র) সাথে আল্লাহর সরাসরী যোগাযোগ ছিল। তখনো অনেকে ঝড় তুফানের সময় আল্লহ, আল্লাহর রসূল(স) ও বেদনশাহ(র) এর দোহাই দিয়ে থাকেন।

স্থানীয় লোক জন স্থানটি অধিগ্রহনের ঝোপঝাড় শুন্য এলাকায় পরিনত হয়। পরর্বতীতে যেন এলাকাটিতে ঘন বসতি স্থাপন হলে এলাকাটিতে অস্তানা সহ একটি মক্তব নির্মত হয়। অনেকে এই মাজার প্রাঙ্গাণে এসে আধ্যাত্মিক প্রবাহে অবগাহন করে পরিতৃপ্ত হন। এলাকাটির ভাল সংরক্ষনের অভাবে জৌলুসতা ম্লান হতে চলেছে। প্রতি বছর ২৫শে মাঘ বেদনশাহ(রহ.)- এর ওরস মোবকারক পলিত হয়।

০২।ইউসুফ দেওয়ান (র)ঃ  ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর গ্রামে ইউসুফ দেওয়ান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছবদু শেখ। ইউসুফ দেওয়ান কিশোর বয়স হতেই কিছুটা অত্মভোলা ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর থেকে তিনি আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্ময়য়োগ করেন। এক পর্যায়ে পানাইল জমিদার বাড়ির পাকা খানকায় অস্তানা তৈরী করেন। এই আস্তানার পাশে একটি জিকাগাছ রোপন করেন। এই গাছের গোড়া থেকে মাটি কবজ হিসেবে ব্যবহার করে অনেকে রোগ-বালাই থেকে অব্যাহতি ও মনস্কাম পূর্ণ হয়েছে বলে শোনা যায়। মৃত্যুর পরে গোপালপুর গোরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

 

০৩। পানাহ উল্লাহ মুন্সী (র)ঃ জনশ্রুতি শাহ সুফী হযরত মওলানা পানাহ উল্লাহ মুন্সী(র)- এর বাবা ভারত বর্ষে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গ দেশে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে এসে ছিলেন। তিনি আর ফিরে যাননি। এ দেশের  মাটি মানুষকে ভালোবেসে দিনের আবাস গ্রহন করেন। তাঁর এক পুত্র পানাহ উল্লাহ মুন্সী। তাঁর শেষ পর্যন্তু জীবনপাত ঘটলে পানাইল গ্রামে চির নিদ্রায় শায়িত হন।

জনশ্রুতি শাহ সুফী হযরত মওলানা পানাহ উল্লাহ মুন্সীর নামানুসারে পানাইল গ্রামের নামকরন হয়েছে। পানাহ উল্লাহর বংশধরেরা পানাইল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছেন। তিনি বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তাঁর অসংখ্য ভক্ত মুরিদান আজও তাঁর বাক্য পালন করে দীন খেদমতের আঞ্জাম দিচ্ছে। পীর খেতারী পানাহ উল্লাহ মুন্সীর মাজারে বার্ষিক ইসলামী জলসা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে কে বি এন্ড কিউ শাহ ছিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসা নির্মিত হয়েছে।