Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

উপজেলার ঐতিহ্য

আলফাডাঙ্গা উপজেলার ভূ-প্রকৃতি ও ভৌগলিক অবস্থান এই উপজেলার মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি গঠনে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পর্শ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত এই উপজেলাকে ঘিরে রয়েছে  ঢাকা বিভাগ ও খুলনা বিভাগের যথাক্রমে বোয়ালমারী,কাশিয়ানী,লোহাগরা,ও মোহাম্মদপুর উপজেলাসমূহ। এখানে ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার মতই তবুও কিছুটা বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন কথ্য ভাষায় মহাপ্রাণধ্বনি অনেকাংশে অনুপস্থিত, অর্থাৎ ভাষা সহজীকরণের প্রবণতা রয়েছে। আলফাডাঙ্গা, উপজেলার আঞ্চলিক ভাষার সাথে সন্নিহিত গোপালগংজ,খুলনা ও ঢাকার ভাষার অনেকটা সাযুজ্য রয়েছে। মধুমতি-বারাশিয়া নদীর গতিপ্রকৃতি আলফাডাঙ্গার মানুষের আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাস, ভাষা, সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

এই এলাকার ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে আলফাডাঙ্গার সভ্যতা বহুপ্রাচীন।

 

যেসব সরকারী সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা আলফাডাঙ্গায় কাজ করছে সেগুলো হলোঃ

    * উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী,আলফাডাঙ্গা।
    * সরকারী গণ গ্রন্থাগার,আলফাডাঙ্গা।

    * বেগম সালেহা একাডেমী,আলফাডাঙ্গা।

উপজেলার ভাষা ও সংস্কৃতিঃ

          সামাজিক মূলবোধ যখন ভূলুণ্ঠিত, মানবিক বিপর্যস্ত, চেতনা ও বিবেক বিপর্যন্ত, আকাশ যখন মেঘমেদুর, চলমান সমাজ যখন ঘুণে ধরে যায় ঠিক তখন কোন কোন এলাকার ভাষা ও সাংস্কৃতিক জগৎ ঘুমন্ত জাতিকে সংকীর্ণতার বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে সেই জাতিকে জাগিয়ে তোলে। বাংলার প্রাচীন ভাষা ছিল অষ্টিক জনগোষ্ঠীর ভাষা। আর্যরা এ ভাষাকে অসুর, দস্যু,থেচার জাতীয় প্রাণির ভাষা বলে মনে-প্রাণে ঘৃণা করতো।

            মৌর্ষ ও গুপ্ত আমলে সাংস্কৃতিকে রাজভাষারূপে স্বীকৃত দেওয়া হয়। ৬৫০ খৃঃ হতে ১১০০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত সময় বাংলা ভাষাকে তার সৃষ্টির যুগ বলা হয়। প্রাচীন কালে বাঙ্গালী জাতি থেকে বাংলা ভাষা চালু হয়। তারপর হাটি হাটি পা - পা করে এই ভাষা যৌবন প্রাপ্ত হয়।

            আস্তে আস্তে এই বাংলা সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে। আলফাডাঙ্গা স্থানীয় বাসিন্দা যারা রয়েছে ১০০ ভাগই বাংলার কথা বলে। সমাজে যারা একটু উচ্চ শিক্ষার অধিকার তারা অন্য দু‘একটি ভাষা জানলেও বাংলা ভাষার মাধ্যমেই তাদের দৈনন্দিন কাজ চলে। বাংলা ভাষার কথা বললেও আঞ্চলিক ভাষার প্রভাব বেশী নয়।

            এখানে অনেক দামী - নামী কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী খুব বেশী না থাকলেও এলাকাবাসীদের সংস্কৃতির প্রতি মন আছে, আছে তাদের প্রাণ। বৎসরের বিভিন্ন মৌসুমে নিজেরাই জাগিয়ে তোলে তাদের নিজেদের গড়া সাংস্কৃতিক জগৎটা। তবুও বলা যেতে পারে দিনে দিনে এগিয়ে যাচ্ছে ভাষা ও সাংস্কৃতিতে উন্নতির দিকে মন্থর গতিতে। অদূর ভবিষ্যতে আলফাডাঙ্গার সকল শিল্পী, কলাকুশলী ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের গ্রাণ কেন্দ্র স্থান করে নিতে পারবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে।

শীতের আগমনের সাথে সাথে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে রাতের বেলায় বিচার গানের আসর বসত। আশে পাশের উপজেলা ও জেলার প্রখ্যাত বিচার গানের আসরে মাদারীপুরের বিচার গানের সম্রাট আঃ হালিম বয়াতী, দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের প্রখ্যাত বিচার গানের বয়াতী মোসলেম বয়াতী তার জামাতা গোলাম কিবরীয়া, খুলনার আকরাম বয়াতী, নড়াইলের রওশন বয়াতী,হাজরা বিবি, মহাম্মদপুরের পবিত্র কুমার বিচার গানের আসরে গান পরিবেশন করতেন। এদের আগমনে এলাকার মানুষের মাঝে গান শোনার উৎসাহের সাড়া পড়ে যেত। এছাড়া স্থানীয় বয়তীদের মধ্যে ছিল পানাইলের কিয়ামুদ্দিন বয়াতী, চরডাঙ্গার সরোয়ার বয়াতী ও কাঞ্চন আলী, হেলেঞ্চার বাকা বয়াতী, বানার দলিলউদ্দিন ও মোসলেম বয়াতী প্রমুখ। এ সব প্রখ্যাত বিচার গানের বয়াতীদের গানের ভাব ও সুরের মুছনায় উপস্থিত শ্রোতারা গানের ভাব জগতে নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলত।

আলফাডাঙ্গা উপজেলায় তেমন কোন দর্শনীয় স্থান নাই, তবে মধুমতি নদীর গতিপ্রকৃতি ও আলফাডাঙ্গার সবুজ প্রকৃতি খুবই দর্শনীয়। এ ছাড়া আলফাডাঙ্গায় বিষ্ণুপাগলের আস্তানা, বুড়াইচ ও চাঁদড়া জমিদার বাড়ী,বুড়াইচ নীলকুঠি, বানা বাজার মসজিদ ও শিরগ্রামের রাধা-গোবিন্দ মন্দির এখানকার সুন্দর যায়গা।

এ ছাড়া নিম্নে উল্লিখিত স্থানগুলো  খুবই দর্শনীয়।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার দর্শনীয় স্থানসমূহঃ

১) মীরগঞ্জ নীলকুঠিঃ

 

অষ্টাদশ শতকে মধূমতি, বারাশিয়া, চন্দনা প্রভৃতি নদীর তীরবর্তী উর্বর জমিতে নীল চাষ করা হত। আলফাডাঙ্গার মীরগঞ্জে তখন প্রধান কুঠি স্থাপন করা হয়েছিল। এই কুঠির অধীনে ৫২টি কুঠি ছিল। কুঠি ঘিরে গড়ে উঠেছিল বিশাল বাজার। প্রধান ম্যানেজার ছিলেন ডানলপ। নীল কর ডানলপ চাষীদের বাধ্য করে নীল চাষ করতে থাকেন। নীল চাষে নিরুৎসাহীদের নীল কুঠিতে ধরে এনে অমানবিক অত্যাচার করা হতো। জানা যায় এক বিঘা জমিতে নীল উৎপাদন ৮ থেকে ১২ বান্ডিল। ১০ বান্ডিলের মূল্য ছিল ১ টাকা। এই টাকা থেকেও কৃষকদের সামান্য কিছু দেওয়া হতো। পক্ষান্তরে নীলকরেরা নীল রপ্তানী করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করত। প্রতিটি কুঠি নিয়ন্ত্রনের জন্য একজন ম্যানেজার থাকত। তাকে বলা হতো বড় সাহেব। বড় সাহেবের সহকারীকে বলা হতো ছোট সাহেব। দেশীয় কর্মচারীদের প্রধানকে বলা হতো নায়েব বা দেওয়ান। নায়েবের মাসিক বেতন ছিল ৫০ টাকা। নায়েবের অধীনে ছিল একজন করে গোমস্তা। গোমস্তারা বড় ও ছোট সাহেবের কথা মতো চলত। তারা কৃষকদের ধরে এনে বেত্রাঘাত করত। এ ছাড়াও সহজ সরল কৃষকের মা বোনদের কুঠিতে ধরে এনে নিযার্তন করত। এ জন্য ইউরোপিয়ানরা নীলকে কৃষকের নীল রক্ত বলে চিহ্নিত করেছে। হাজী শরীয়তউল্লাহ ও তার পুত্র দুদু মিয়া অত্যাচারী নীলকরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কৃষকদের নিয়ে গড়ে তোলেন বিশাল এক লাঠিয়াল বাহিনী। এ বিদ্রোহ এক সময় গণ আন্দোলনে রূপ নেয় যা নী বিদ্রোহ নামে পরিচিত। ১৮৩৮ সালে দুদু মিয়ার নেতৃত্বে বৃটিশ নীলকরদের সাথে কৃষকদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ডানলপ সাহেব আউলিয়াপুর নামক স্থানে পরাজিত হন এবং দলবল নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান।

            এই ডানলপ সাহেবের মৃত্যুর পর তাকে আলফাডাঙ্গার মীরগঞ্জে প্রধান কুঠির পাশে সমাহিত করা হয়। পূর্বে এখানে নীল প্রস্ত্ততের জন্য চুল্লী, লম্বা চিমনি, সিন্দুক, ছোট বড় অনেক ইত্যাদি ছিল। এখন তা ধ্বংস হয়ে মাটিতে পতিত হয়েছে। ঊনবিংশ শতকে নীলের চাষ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় এবং মীরগঞ্জ আস্তে আস্তে জরাজীণ হতে থাকে। শেষ চিহ্ন হিসেবে পড়ে থাকে ডানলপ সাহেবে সমাধি। সম্ভাবত ২০০০ সালের দিকে কয়েকজন লোভী ব্যক্তি সমাধিতে অনেক ধন সম্পত্তি থাকতে পারে এই লোভে এক রাত্রে যন্ত্রপাতি এবং দলবল নিয়ে সমাধি ভেংগে ফেলে। দুঃখের বিষয় তারা এ থেকে কোন মূল্যবান সম্পদ পায়নি তবে কয়েকটি পাথরের বাটি পেয়েছিল বলে লোকমুখে শুনা যায়। বর্তমানে সমাধিটি কয়েক খন্ড ভাংগা অবস্থায় ঐ স্থানেই । সমাধির গায়ে পাথরে খোদাই করা বাংলা ভাষায় কিছু লেখা আজও জ্বলজ্বল করছে। সেই লেখাটুকু গুবহু নিম্নে দেয়া হলো -

অকপুট পরোপকার বিখ্যাত নীল শ্রীযক্ত য়্যানেল কেম্পবল হানলপ ............আয়ের নামক জিলার অন্তঃপতি ডন্ডন্যান্ড নগরে বাস করিয়া সন ১১৯৫ সালে বঙ্গদেশে শুভাগমন করত মিরগঞ্জ প্রভৃতি নীল কুঠিতে ৬০ ষাট বতসর পর্যন্ত অভিশয় যশঃপূর্বক স্বজীবিত কাল যাবত অতিবাহিত করিয়া সন ১২৫৫ সালে কাত্তিক ও শুক্রবারে স্বর্গ হইয়াছেন বান্ধবগণ ও বেতনভোগী ব্যক্তিগণ চিরকাল তদ্বীয় গুনগান স্মরনাথ অর্থব্যয় দ্বারা ....... স্ফোলিত পুস্তক ...... স্থাপিত করিলেন।

 

            মীরগঞ্জ নীরকুঠি আমাদের আলফাডাঙ্গা তথা গোটা বঙ্গ দেশের অত্যাচারী নীলকরদের শোষনের এক ছোট দৃষ্টান্ত তাই আমাদের উচিত মীরগঞ্জ এর শেষ স্মৃতিটুকু রক্ষা করা তা হলে পরবর্তী প্রজন্ম জানবে বাঙলী কত শোষন নিপীড়ন সহ্য করে আজ স্বাধীনতা পেয়েছে।

২) বাজড়া নীল কুঠির ঃ

            আলফাডাঙ্গা উপজেলা মধুমতি নদীর তীরে অবস্থিত বাজড়া গ্রামে নীল কুঠি স্থাপন করে। এখানকার কৃষকদের নীল চাষ করার জন্য নীলকর সাহেবরা চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কয়েক বছর নীলচাষ করে কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে পড়ে। চাষীরা নীল চাষ করা বন্ধ করে দিতে গেলে নীলকর সাহেবদের লাঠিয়াল বাহিনী কৃষকদের উপর অত্যাচার শুরু করে। বাজড়া ও তার আশপাশের কৃষকরা সংগঠিত হয়ে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহে নীলকর সাহেবদের পতন ঘটে। বাজড়া নীল কুঠির নমুনা আজও চোখের সীমানায় ধরা পড়ে। 

৩) কুচিয়াগ্রাম গোল বাওড় ঃ

ষাটের দশকে মধুমতি নদীর মুল স্রোতধারা পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ায় এ উপজেলার কুচিয়াগ্রাম নামক গ্রামে গোলাকাকৃতির বিশাল জলাশয় সৃষ্টি করে। জলাশয়টি গোলাকার আকৃতি বলে ইহাকে গ্রামের নাম অনুসারে কুচিয়াগ্রাম গোলবাওড় বলা হয়। এ ছাড়া এ উপজেলাতে বেশ কয়েকটি হাওড় বাউড় ছিল। যেমনঃ সড়ারকান্দির গজারগাড়িয়ার বিল, টিকরপাড়ার বিল, ঘিদয়ার  চ্যালেনদার বিল, শুকুরহাটার রক্ষাচন্ডীর বিল, পানাইলের নাপতির ঘোপ, কুলধরের বিল, ফুলবাড়িয়া শাপলার বিল, নওয়াপাড়ার হাওড় এবং বাঁকাইলের বলার দুয়া। এক সময় এ সব বিলে চৈত্র-বৈশাখ মাসে ৭র্ - ৮র্ পানি পানি থাকত এবং এখানে প্রচুর পরিমানে সুস্বাদু দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। মোট কথা এ সব ছিল দেশীয় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র। যার প্রেক্ষিতে এ উপজেলার মানুষের মাছের কোন ঘাটতি ছিল ন। ‘‘মাছে ভাতে বাঙলী’’ কথাটি এ উপজেলার মানুষের ক্ষেত্রে শতভাগ প্রযোজ্য ছিল। কিন্ত কালের স্রোতে একমাত্র কুচিয়াগ্রাম গোল বাওড় ব্যতিত এ উপজেলার অন্য কোন বিলে শুস্ক মৌসুমে পানি থাকে না। এ কারনে এ সব বিলের মাছের প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ‘‘মাছে ভাতে বাঙলী’’ কথাটি আর এ উপজেলার মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজন্য নেই। বর্তমানে কুচিয়াগ্রাম বাওড়টিতে শুস্ক মৌসুমে ৫র্ - ৬র্ পানি থাকে ও দেশীয় মাছে ভরপুর এবং উপজেলার একমাত্র দেশীয় মাছ উৎপাদনের প্রজনন ক্ষেত্র। এ বিলের উল্লেখযোগ্য মাছ হচ্ছে শিং, মাগুর, কৈ, শোল, গজার, বোয়াল, রুই, কাতলা মৃগেল,টাকি, ফুটি ও মলা মাছ প্রভৃতি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সরকারি ভাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। গ্রামের ভূমিহীন দরিদ্র প্রায় ১০ - ১৫টি পরিবার এ বিল থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। বি,এস জরিপ অনুযায়ী এ বিলের আয়তন ০৮.৫০ একর এবং বর্ষা মৌসুমে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১০০ একর হয়। এ বিলের সাথে মধুমতি নদীর একটি সংযোগ খাল ছিল। কিন্ত কিছু পরিবেশ ধ্বংসকারী স্বার্থানেষী মহল এই সংযোগ খালটি মাটি দ্বারা ভরাট করে ফেলেছে। এ কারনে বর্ষার পানি আর এ বিলে প্রবেশ করে না। বৃষ্টির পানিই বিলটির একমাত্র ভরসা। বর্ষার পানি না প্রবেশ করায় মধুমতি নদীতে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আর এ বিলে পাওয়া যায় না। যখন  এ বিলের সাথে মধুমতি নদীর সংযোগ খাল চাল ছিল, মধুমতি নদীর পলি মিশ্রিত ঘোলা পানি এসে বাওড় টইটুম্বুর হয়ে যেত। বিলের চারপাশের আবাদী ফসলী জমির ধান ক্ষেত সবুজে সবুজে একাকার হয়ে যেত। বিলের পাশেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চু বেড়ী বাঁধ থাকায় বিভিন্ন এলাকা হতে আগত প্রকৃতি প্রেমিকেরা প্রতি দিন পড়ন্ত বেলায় এই নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য বেড়ী বাঁধে ভিড় জমাত। শুস্ক মৌসুমে ঝাকে ঝাকে বিভিন্ন প্রজাতির অথিতি পাখির কিচিরমিচির কলরবে আশে পাশের এলাকা মুখরিত হয়ে উঠত। উপজেলা প্রশাসনের কড়া নজরদারীর কারনে কেউ অথিতি পাখি শিকার করার সাহস পায় না।

 

প্রাচীনকাল থেকেই আলফাদাঙ্গা উপজেলার জনেগাষ্ঠী ক্রীড়ামোদী। এখানে প্রতিবছরই বিভিন্ন টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এখানকার জনপ্রিয় খেলার মধ্যে বর্তমানে ক্রিকেট , ফুটবল ও ব্যাটমিন্টনের আধিপত্য দেখা গেলেও অন্যান্য খেলাও পিছিয়ে নেই। এখানে  বেশ কয়েকটি খেলার মাঠ রয়েছে। এর মধ্যে আলফাডাঙ্গা এ,জেড পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠ , আলফাডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজ খেলার মাঠ ও-আলফাডাঙ্গা আদর্শ ডিগ্রী কলেজ খেলার মাঠ উল্লেখযোগ্য ।

 

নদ-নদী

বারাশিয়া-মধুমতি নদী দ্বারা বিধৌত আলফাডাঙ্গা উপজেলা।

১) মধুমতিঃ

মধুমতি পদ্মা একটি শাখা নদী। এর অপর অংশের নাম গড়াই। মরমী কবি লালনশাহ এর স্মৃতিধন্য কুষ্টিয়া জেলার পাঁচ কিলোমিটার উজানে তালবাড়িয়া নামক স্থানে গড়াই নদীর উৎপত্তিস্থল। গড়াই নদীর গতিপথ দীর্ঘ এবং বিস্তৃত। উৎপত্তিস্থল হতে মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর পর্যন্ত নাম গড়াই । এখান হতে নদীর নাম হয় মধুমতি । মিষ্টি পানি বহন করে বলে সম্ভবত এর নাম মধুমতি। কামারখালি হতে মোহনা পর্যন্ত নদীর পানিতে জোয়ার ভাটা খেলে। মধুমতি খুলনা জেলার আঠারবেকীতে বাগেরহাট জেলায় প্রবেশ করেছে। পরবর্তীতে বরিশালের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হরিণঘাটা মোহনার নিকট বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। মধুখালী উপজেলার কামারখালী হতে মধুমতি নদী বোয়ালমারী, কাশিয়ানী, ভাটিয়াপাড়া, গোপালগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পিরোজপুরের নাজিরপুর গিয়ে মিশেছে। গড়াই (মধুমতি) নদীর তীরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত শিলাইদহ কুঠিবাড়ী কুষ্টিয়া শহর হতে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে নদীর তীরবর্তী স্থানে অবস্থিত । বাউল সম্রাট লালন শাহের মাজার গড়াই নদীর তীরে ছেউড়িয়া গ্রামে অবস্থিত। বাংলার অন্যতম লেখক রায় বাহাদুর জলধর সেনের বাড়ী মধুমতির তীরবর্তী কুমারখালীতে অবস্থিত। স্বাধীনতার পূর্বে মধুমতি নদীর নব্যতা যখন বেশি ছিল। তখন নদীতে কুমির, কামট ও ভাসাল জাতীয় হিংস্র জলজ প্রাণী বাস করত। মানুষ এদের ভয়ে নদীর কুলে খওড় বানিয়ে গোসল করত। মধুমতি নদীতে সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়। যেমনঃ ইলিশ, রিটা, বাচা, ঘাড়ো, পোয়া, চিংড়ি, বেলে, আইড়, রুই কাতলা, মৃগেল, চাপলে, বাশপাতা, ছনখুড়ো, রাম টেংরা ও কালিবাউশ প্রভৃতি।

চন্দনা - বারাশিয়াঃ

চন্দনা পদ্মার একটি শাখা নদী। পাংশা উপজেলার ডাহুকা নামক স্থানে এর উৎপত্তিস্থল। ফরিদপুর জেলার সর্ব উত্তর দিক হতে কচ্ছপ গতিতে প্রবাহিত নদীটি জেলার পশ্চিম সীমানায় উত্তর দিক হতে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে গড়াই নদীতে পতিত হয়েছে। উৎপত্তিস্থল হতে চন্দনা পাংশা উপজেলার ভিতর দিয়ে কালুখালী পর্যন্ত এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হয়েছে। তারপর সোজাসোজি দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে কামারখালী ও মধুখালীর মধ্যবর্তী আড়কান্দি গ্রামে বারাশিয়া নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এখানে এই নদীর নাম চন্দনা-বারাশিয়া বা চন্দনা- আড়কান্দি। চন্দনা - বারাশিয়া এই মিলিত স্রোত আরোও দক্ষিণ দিকে বোয়ালমারী ও কাশিয়ানী উপজেলার ভিতর দিয়ে এগিয়ে ভাটিয়াপাড়া বাজারের উত্তর পাশে গড়াই -মধুমতি নদীতে পতিত হয়েছে। নদীটি বর্তমান ভরাট হয়ে গেছে এবং অধিকাংশ স্থানই বর্ষা মৌসুম ছাড়া শুকনা থাকে । নদীর ভাঙ্গন প্রবণতা কম। নব্যতা নাই। পূর্বে চন্দনা নদীর সাথে গড়াই ও কুমার নদীর সংযোগ ছিল। গড়াই এবং কুমার উভয়ই পদ্মার শাখা নদী। বস্ত্ততঃ গড়াই নদীর প্রবাহ চন্দনা নিজে বয়ে নিয়ে তার কিয়দংশ ঢেলে দিত কুমার নদীতে। কিন্ত নদীর গতিপথ পরিবর্তন, বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি কারণে গড়াই এবং কুমারের সাথে চন্দনার সংযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয়ে নদীটি খননের কাজ হাতে নেয় যার ফলে বর্তমানে নদীটিতে পুনরায় পানির প্রবাহ শুরু হয়েছে।